অথচ কি অদ্ভুত! আজ কয়েক মাসের ব্যবধানে এখন প্রতিটা দিনই শুক্রবার হয়ে গেছে!
এখনো দিন যাচ্ছে আগের মতো। সূর্য উঠছে। প্রতি ভোরে এখনো অভ্যাসমতো ঘুম থেকে জাগছি। শুধু নেই আগের সেই চাঞ্চল্যটা; আগের সেই দৌড়ঝাঁপের গৎবাঁধা গরজটা।
কেউ কি কস্মিনকালেও ভেবেছিল, কিছুদিন পর এমন এক সময় আসবে! সর্বশেষ কবে মানুষ সম্মুখীন হয়েছিল এমন পরিস্থিতির?
কদিন যাবৎ মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস পড়ছি।
আসলেই। এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা কেউই আগে পড়িনি। তাই জানি না, সমাধান কীভাবে আসবে। শুধু জানি, আমাদের লড়তে হবে। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হবে। হাল ছেড়ে দেয়া চলবে না।
দেখতে দেখতে বন্দিত্বের চার মাস হতে চলছে। দিন যত যাচ্ছে, শুধু অবনতিই চোখে পড়ছে। শুরুতে রোগীর সংখ্যা ছিল কম। মানুষের ভয় ছিল বেশি। এখন রোগী যত বাড়ছে, পুরো অস্বাভাবিকভাবে মানুষের সচেতনতা আরও কমছে।
সেদিন হঠাৎ করেই পড়ে গিয়ে চশমাটা ভেঙে গেল। নাকের ওপর মাইনাস টু (-2.0) পাওয়ারের চশমাটাকে আমার প্রেমিকাই বলা চলে। তাকে ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার। কী আর করা! গেলাম গাঙ্গিনার পাড়—চশমার দোকানে।
তাতে ক্ষতিটা তো নিজেদেরই হচ্ছে! হু হু করে প্রতিনিয়তই বাড়ছে সংক্রমণ, আক্রান্তের সংখ্যা। যারা পরিণতির স্বীকার হচ্ছে, তারাই শুধু বুঝতে পারছে পরিস্থিতির ভয়াবহতা।
দেখতে দেখতে আমাদের ময়মনসিংহেও রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী ‘কাঁচিঝুলি’কে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে রেড জোন হিসেবে।
ইদানীং বৃষ্টি হচ্ছে খুব। বর্ষার ভরা মৌসুম চলছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের কোভিড-১৯ রোগের গ্রাফের মতোই হুহু করে বাড়ছে বন্যার পানি। সেই সঙ্গে প্রাণ ফিরে এসেছে আমাদের ব্রহ্মপুত্রেও। নদের পারে এখন একটু পরপরই চোখে পড়ছে ইয়া বড় বড় ছিপ জাল। জালগুলোর গোড়ায় জ্বলজ্বল করছে সদা চকচকে দুটি করে চোখ। বর্ষায় নদের পারের সে জগৎ বড় বিচিত্র, বড় আলাদা...
আজকাল বড় আলসে হয়ে গেছি। একই সঙ্গে ঘুমকাতুরে। দিনে ঘুমাই। রাতে ঘুমাই। সময়ে–অসময়ে যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ি। তাতে খারাপ লাগে না অবশ্য। বনের সিংহ নাকি দিনের বিশ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটায়। যখন ঘুম আসে, নিজেকে সিংহের সঙ্গে তুলনা করি। ভালোই লাগে তখন!
সবমিলিয়ে ভালোই আছি। সুস্থ আছি এখনো। কৃতজ্ঞতা সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
তবে জানি না, এই ভালোটা আর কত দিন টিকবে।
সেদিন তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে লাগাতার বাসার তিনজনের জ্বর, গলাব্যথা। ছোট বোনকে দিয়ে শুরু। দ্বিতীয়তে বাবা। শেষে আমি।
আসলে সময়টা এখন এমন, সাধারণ সর্দি–কাশিও বড় ভয় ধরিয়ে দেয়।
লিখতে লিখতে অনেক কিছুই লিখলাম। প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু। ওদিকে রাতও শেষ হয়ে আসছে। বৃষ্টি থেমে গেছে। ঘোলাটে চাঁদটাও দূরে ডোবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন শেষ করি।
তার আগে কামনা—সবাই ভালো থাকুক, সুন্দর থাকুক, সুস্থ হয়ে উঠুক আমাদের পৃথিবী। অতি তাড়াতাড়ি ফিরে আসুক আগের সেই দিনগুলো। করোনা–পরবর্তী পৃথিবীটা হোক সব দুঃখ-কষ্ট, হারানোর বেদনামুক্ত।
জানি, একদিন করোনা থাকবে না।
সেদিন এই করোনাকালীন অদ্ভুত সময়গুলো হবে শুধুই স্মৃতি। সেই দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনি সারাক্ষণ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment