adsera ad

Friday, July 10, 2020

উড়ো চিঠি , লিখা-মুহাম্মদ সাকিল হোসাইন

মার প্রিয়তমা,

কেমন আছেন আপনি? যদিও তা জানাবার যোগ নেই তবুও প্রশ্ন রাখি, খতে হয় নাকি! জানেন তো; আমি ভালো নেই, ভালো নেই আমার ভাবরী কাল। সেই কবে, ক..বে এক মধ্য দিনে এই আলোকিত পৃথিবী নামক অন্ধরমহলে বন্দী হয়েছি। এখন দিবা- নিশি কিচ্ছুটি টের পাই না। আজ, কত দিন হলো এভাবেই আছি তাও জানিনা। মাঝে মধ্যে কীসের যেন দীপ্ত জ্বলে মহলে, এই যে এখন, এখনো জ্বলছে। আর আমি সেই দীপ্তেই লিখছি আপনার কাছে, ঠিকানাবিহীন এক উড়ন্ত শামুকভাঙা চিঠি। আমি যে, আপনার ঠিকানা জানিনা। আমাদের শেষ দেখা হয়েছিলো যেখানটায়, যেখানটায় আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়েছিলেন, ভালোবাসার স্মৃতি স্বরূপ আমিও চুম্বন এঁকেছিলাম আপনার অধরে সেই রেস্তোরায় , আমি এর পরেও দু বার ঘুরে এসেছি, ঘুরে এসেছি আপনার ঠিকানায়ও। তবে দেখা মিলেনি আপনার। ঠিকানা পাল্টিয়েছেন নিশ্চয়।নাকি না,ঠিক জানিনা। হয়তো, এই চিঠি এই অন্ধরমহলেই কোন এক কোণে পড়ে থাকবে, তবুও লিখছি। আপনাকে লিখতে ভালো লাগে, নয়তো এমন অবস্থায়ও কেউ লিখতে বসে নাকি!মনে আছে!আপনাকে নিয়েই লিখেছিলাম আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতা"তুমি সুন্দর"।আসলে আপনিই ছিলেন আমার লেখার রস,আপনি নেই এখন তেমন লেখাও আর আসেনা।যেগুলো আসে সেগুলোতে প্রেম নেই,আছে বিরহের সুর আর বিদ্রোহ।তবে বিদ্রোহ থাকতো না, যদিনা আপনার মস্তিষ্কের থ্যালাসেমিয়ার পরিবর্তন ঘটতো। প্রিয়তমা,আপনার দেখানো স্বপ্নের পথে চলতে গিয়ে আমার জীবনটা এমন ছন্নছাড়া হয়েছে কেন! আমি জানি না, এর উত্তর আপনার জানা আছে প্রিয়তমা? আমাকে আপনারা পাগল ভাবছেন নাতো? প্রিয়তমা, আপনি আমাকে খোঁজেন না? নাকি ভুলে যেতে চান? না, না এ সম্ভব না, ভুলে যাওয়া যে সহজ কিছু নয়। আমাকে ভুলতে গেলে আপনাকে মনে করিয়ে দিবে আমার অষ্টাদশী চুমু, আমার আলিঙ্গন।প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ঘন্টার পর ঘন্টা গত হওয়া সময়গুলো।একই রিক্সায় পুড তুলে হাতে হাত রেখে দুজনের পথ চলা।ভুলতে পারবেন!কোনো কারনে আপনার আঁখিদ্বয়ে বর্ষন হলে গড়িয়ে পড়ার আগেই আমার জিহ্বার স্বাদ নেওয়া।ভূলতে পারবেন!কোনো কারনে আপনার মন খারাপ হলে আমার বক্ষে মাথা রেখে সে কষ্ট লাঘব করার চিত্রখানা। ভুলতে পারবেন, আপনার পাপড়িতে খাওয়া শেষ চুম্বনের কথা? এখন আমার কেমন কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করে, প্রিয়তমা। হয়তো আপনার কাছেই। আচ্ছা এভাবে আর কাউকে প্রেম বিলিয়েছিলেন কখনো? পাপড়িতে লোচন গড়িয়ে যে জল পড়েছিলো, ওটা কী ছিলো? ভালোবাসেননি আমায়? কষ্ট কি আমি একা পাচ্ছি প্রিয়তমা? আপনি চাইলেই কিন্তু পারতেন আমাদের একটা সংসার গড়তে। আমি তো আমাকে সঁপেই দিয়েছিলাম আপনাকে। আপনি আমাকে কাছে টেনে সরিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, ভাগ্য সবার হয় না! আমি ভালো নেই, আমি ভালো নেই, আমি ভালো নেই। বিশ্বাস করেন আমি ভালো নেই। আর একবার ওভাবে ভালোবাসবেন? একটু আদর? আমি যে আদরের ভিখারি।আদরের অভাবে শুকিয়ে গেছে, একটা জ্যান্ত গাছ। ফুল পাতা সবেই আজ একটু উঞ্চতার অভাব অনুভব করে। আরও তো অনেক বন্ধু ছিলো আমার। কই! ওদের জন্য তো এমন অনুভূতি পুষে রাখি না, কষ্ট পাই না। এই যে এই মহলেও আমার অনেক বন্ধু হয়েছে, ভাঙা একটা টিনের ঘর, দুটো সোফা, একটা টেবিল, টেবিলে উপরে- নিচে ছড়িয়ে -ছিটিয়ে কয়েকটা বই, ৫টা ছেড়া খাতা, কালি শুকিয়ে যাওয়া ৩টা কলম। কিছু টিকটিকি, আরশোলা, এক দলা পিঁপড়েও আছে। এদেরকে আপনার গল্প শুনাই,ওরা শুনে, কথা বলে না। আমার গল্প ওরা মন দিয়ে শুনে, ঠিক আপনার মতো। আপনি এতো ভালোছিলেন কেন প্রিয়তমা? আমার কপালে এতো সুখ যে সইবার নয়, এই তো এখন এর প্রায়শ্চিত্ত করছি। ছোট বেলায় কত গল্প শুনেছি, শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে রাজকুমারী রাজকুমারের সঙ্গ দেয়,গিড়ে স্বপ্নের মহল। অথচ রাজকুমার আজ আপনার দেখানো স্বপ্নের খাঁচায় বন্দী। আপনি আসেন না!প্রিয়তমা? আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান, আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না, দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আসবেন তো? আমি না হয় রাজকুমার না হয়ে, আপনার দাস হয়েই কাটিয়ে দিবো। আমাকে করুনা করুন। ছিঃ ছিঃ কী বলছি আমি! ভালোবাসায় যে করুনা থাকতে নেই দয়া থাকতে নেই। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটায় চোখ রাখিয়েন, ওটা আমি। আপনার হাতে গড়া এক মৃত অপ্রেমিক। তখন অন্তত এই অপ্রেমিককে একটা নাম দিয়েন। তারাটার দিকে তাকিয়ে যেন ডাকতে পারেন। আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না, চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে অদ্ভুত বর্ষনে।যদিও আজকাল চশমা ব্যবহার করি!তবুও অতি বর্ষনে কীবোর্ডের বাটনগুলো কেমন যেনো আউলিয়ে ফেলছি।অস্পষ্ট অনুভূতি, মস্তিষ্ককে চুষে বেড়ানো কিছু বেওয়ারিশ চিন্তা খুব ব্যথা দেয়ার সময় গনিয়ে এসেছে।গনিয়ে এসেছে আমারও চলে যাবার। এখন কেমন মৃতকে সঙ্গী করতে ইচ্ছে করছে, আমি জেনে গেছি এর চাইতে বড় বন্ধু আমার কেউ নেই।এমন ভালোবাসা বাঁচিয়ে মরে যাওয়া; কেউ কেউ পারে, সবাই পারে না। আমার ভালোবাসাকে আমি সম্প্রদান করে গেলাম, আপনি এর যত্ন নিয়েন। আর রছিনা প্রিয়তমা চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। আপনি ভালো থাকিবেন।

ইতি

আপনার

অপ্রেমিক।

No comments:

Post a Comment

মা কে মনে পড়ে লেখা সামিরা আক্তার জেবিন

মাগো তুমি কেমন আছো? আমার ছোট্ট গায়, দূর শহরে থেকো মাগো তোমার সোহাগ চায়। . তুমি পাশে থাকলে মাগো লাগতে দিতে না ব্যথা, এই শহরে থেকে এখন মনে পড়ে...